সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত | সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত , সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত , সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য , সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ 2023 , সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা , সুন্দরবনের আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার , নিয়ে অনেকেই ইন্টারনেটে খুজাখুজি করে থাকে তাদের জন্যই মূলত্ব আজকের এই আর্টিকেলটি ।

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত

সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত অনেকেই জানে না আজকে তাদের জন্য আমরা সেই বিষয়ে জানিয়ে দিব । সুন্দরবনের ১৮৭৪   বর্গকিলোমিটার জুরে রয়েছে নদিনালা বিলের অঞ্জল । জীব ও উদ্ভিদ প্রচুর থাকায় সুন্দরবন কে জীব ও উদ্ভিদের যাদুঘর বলা হয় । রয়েল বেঙ্গেল টাইগার সহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি , হরিণ, চিতাবাঘ , সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির প্রানি রয়েছে এই সুন্দরবনে । সুন্দরবনে রয়েছে ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ , ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮ প্রজাতির উভয়চর প্রানী । সুন্দরী বৃক্ষের নাম অনুসারে এই  বনের নামকে সুন্দরবন রাখা হয়েছে ।

এক নজরে দেখে নেই !

  • সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
  • সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ 2023
  • সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা
  • সুন্দরবনের আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার

সুন্দরবনের আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার

প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যের আরেক নাম হলো সুন্দরবন । সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০০০০ বর্গ কিলোমিটার । এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন । সুন্দর বন বাংলাদেশ আরে ভারতে মধ্যে অবস্থিত । সুন্দরবনের আয়তনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার অংশ রয়েছে বাংলাদেশের ভুখন্ডে । খুলনা,সাতক্ষীরা , বাগেরহাট ,পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন ।

সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত । খুলনা ও মোংলা থেকে সবচেয়ে  কাছে করমজল ও হারবাড়িয়া । নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে সমুদ্রের পানি শান্ত থাকে তাই এই দিনে ভ্রমণ সবচেয়ে ভালো সময় । সুন্দরবনের মুল স্বাদ নিতে চাইলে আপনাকে বনে ভিতরে যেতে হবে ।

সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

সুন্দরবন একটি বিশাল অঞ্জল।বন বিভাগ থেকে মাত্র কয়েক টি স্থানে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া আছে । খুলনা , বাগেরহাট , সাতক্ষীরা ও বরগুনা থেকে সুন্দরবন ঘুরে দেখা যায় । খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা দিয়ে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে । খুলনা ও মোংলা থেকে ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে করমজল, হারবাড়িয়া, কছিখালি, কটকা , জামতলা ও হিরন পয়েন্ট এবং দুবলার চর ।

সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

করমজলঃ করমজল এমন একটি জায়গা যেখান কুমির ও হরিণের প্রজনন কেন্দ্র । মোংলা সবচেয়ে কাছে করমজলের অবস্থান।করমজলে আছে বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া যায় কাঠের পুলের ট্রেইল, হরিণ , কুমির ও বানর সহ নানান প্রজাতির  গাছগাছালি । সুন্দর বনের খুব গহিন জঙ্গলে গিয়েও যদি পশুপাখি দেখতে না পান তাহলে চলে আসবে করমজলে এখানে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাবেন ।

হারবাড়িয়া ঃ মোংলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে হারবাড়িয়ার অবস্থান।হারবাড়িয়া সুন্দর বনের অন্যত্ম একটি পর্যটনের স্থান।হারবাড়িয়ার মুল আকর্ষণ হলো বনের ভিতর দিয়ে কাঠের ট্রেইল যাওয়া যায়।কাঠের ট্রেইলটা পুরোটা ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট।সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখানে পদ্মপুকুর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে।ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পুরো হারবাড়িয়া দেখতে পাবেন।

কটকাঃ কটকায় সবচেয়ে চমতকার দৃর্শ্যটা হলো এখানে বন্য হরিণের দলের সাথে দেখা হবে আপনার।ফরেষ্ট স্টেশনের দক্ষিনে বঙ্গোবসাগর।এই বঙ্গোবসাগরের কোল ঘেষেই কটকার অবস্থান।কটকা থেকেও কাঠের ট্রেইল যাওয়ার রাস্তা ।কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট হাটলেই মিলবে বন্য হরিণ দলের সাথে।

জামতলা সৈকতঃ কটকা খুব কাছেই জামতলা সৈকতে অবস্থান।জামতলায় রয়েছে পর্যটকের টাওয়ার সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো সুন্দর বনের অধেকটা দেখতে পাবেন।যদি কপাল ভালো থাকে তাহলে দেখতে পারবেন বাঘ কিংবা হরিণের দল।জামতলা ঘাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে জামতল সী বীচ।জামতলা সী বীচে যেতে চাইলে আপনাকে জামতলা ঘাট থেকে পায়ে হেঁটে আসতে হবে।

মান্দারবাড়িয়া ঃ মান্দারবাড়িয়া থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন।আপনি যদি মান্দারবাড়িয়া যেতে চান তাহলে আপনাকে সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দর বনে ডুকতে হবে।

দুবলার চরঃ সুন্দর বনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট একটি স্থান হলো দুবলার চর।দুবলার চরে মাঝ বরাবর বয়ে গেছে ছোট একটি নদি যা মিলেছে বঙ্গোবসাগরে।রাসমেলা , শুটকি ও হিন্দুধর্মের পূন্যস্নান হলো বঙ্গোবসাগর।অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গড়ে উঠে জেলেদের বস্তি মাছ ধরার জন্যে ।পাশাপাশি শুটকি শুকানোর কাজও চলে এখানে।

সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত

সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত কে না জানতে চায় বলেন । আমার যত বন্ধু বান্ধব আছে তাদের মধ্যে অনেকেই সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত জানার জন্য আমাকে পারশনাল ভাবে মেসেজ করেছে । বঙ্গোপসাগরের কাছেই সপ্তমুখী নদীর মোহনায় এই আর্যচ্য দ্বিপটির অবস্থিত ।

ন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত
সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা

আপনি চাইলেই ৫-৬ জন মিলে বা একা সুন্দরবনের গহীনে ঘুরতে যেতে পারবেন না । সুন্দরবনের ভিতরে ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই ফরেস্ট অফিস থেকে নিধারিত ফ্রি জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হবে । সঙ্গে অবশ্যই নিরাপত্তরক্ষী রাখতে হবে । তা না থাকলে আপনকে সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না ফরেস্ট অফিসার । আর হা সব গুলো স্থানে ঘুরতে লঞ্চ বা শীপের বিকল্প কিছুই নেই ।

আমি আপনাদের বলবো আপনার নিরাপত্তা, অনুমতি আর খরচ এত জটিল প্রক্রিয়ায় যাবেন না । সুন্দরবন ভ্রমণের সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় হচ্ছে কোন ট্যুর অপারেটরের সাথে যাওয়া । এই ট্যুর প্যাকেজের  মধ্যেই আপনার লঞ্চ বা শীপে উঠা থেকে নামা পর্যন্ত , নিরাপত্তারক্ষী ও গাইড , ৩ বেলা খারাব ,২ বেলা নাস্তার ব্যবস্থা সহ যাবতীয় খরচ এই প্যাকেজে থাকে ।

সুন্দরবন ভ্রমণের যাওয়ার উপায়

সুন্দরবন ভ্রমণে যাইতে চাইলে মোংলা হয়ে কিংবা খুলনা থেকে যাওয়া যায় । খুলনা থেকে শীপ ছেড়ে মোংলা হয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করে । এই দুটি পথই সব চেয়ে জনপ্রিয় সুন্দরবন ভ্রমণের ।

ঢাকা থেকে খুলনা বাসে বা ট্রেনে সরাসরি যাওয়া যায় । ঢাকা গুলিস্তান। গাবতলি ও সায়দাবাদ থেকে সরাসরি খুলনার বাস পাওয়া যায় । নন এসি বাসের ভাড়া ৬০০- থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৮০০-১৪০০ টাকা হয়ে থাকে।আর ঢাকা থেকে সরাসরি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সকালে ছেড়ে যায়।চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যায় সন্ধ্যায় । ভাড়া সিটের ক্লাস হিসেবে ৫০৫ টাকা থেক ১৭৩১ টাকা হয়ে থাকে ।

ঢাকা থেকে মোংলা যাবার সরাসরি সেমি চেয়ার বাস পাওয়া যায়।রাজধানী আরমান পরিবহ্নের নন এসি বাসে মোংলা যেতে আপনার খরচ হবে ৪৫০-৫০০ টাকা ।

মোংলায় সরাসরি ভালো বাস যায় না । মোংলায় ভালো বাসে যেতে চাইলে আপনাকে খুলনার বাসে উঠতে হবে ।সেক্ষেত্রে খুলনার আগেই কাটাখালী নামক স্থানে আপনাকে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে বাস বা সিএঞ্জি অথবা বাইকে করে ৩২ কিলোমিটার দূরে মোংলা যাওয়া যায়।আবার খুলনা থেকে মোংলা যেতে পারেন।

বাসে ঢাকা থেকে খুলনা বা মোংলা যেতে ৭-১০ ঘন্টা লাগতে পারে।বাস যাত্রায় যেহেতু ফেরী পাড়ি দিতে হয় সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে।তবে পদ্মাসেতু চালু হয়ায় সম্য অনেক খানিই কমে গেছে ।

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ 2023

আপনি যদি একাই সুন্দরবন ভ্রমণে যান তাহলে আপনাকে সব কিছু নিজেকেই সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ 2023 ম্যানেজ করা লাগবে সেইক্ষেত্রে প্রতিটা জায়গায় প্রবেশের জন্য ফ্রি দিতে হবে । কিন্তু আপনি যদি কোন ট্যুর এজেন্সির সাথে  সুন্দরবন ভ্রমণে যান তাহলে আপানর সাধারণ সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ গুলোতে সব ধরণের ফ্রি অন্তর্ভুক্ত থাকে।সেক্ষেত্রে আপনাকে আর আলাদা করে ফ্রি দিতে হবে না ।

সুন্দরবনের ভিতরের এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জন প্রতি ভ্রমণ ফ্রি-১৫০টাকা ।ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য- ৩০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফ্রি _ ১৫০০ টাকা। সুন্দরবনের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফ্রি _ ৭০ টাকা , ছাত্রছাত্রীদের জন্য _২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ফ্রি _ ১০০০ টাকা ও গবেষ্কদের জন্য ভ্রমণ ফ্রি ৪০ টাকা ।করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফ্রি জন প্রতি ২০ টকা এবং বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা করে।

সুন্দরবন ভ্রমণের রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের জন্য জন প্রতি ফ্রি ৫০ টাকা করে দিতে হয় । নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফ্রি ২০০ টাকা অনিবন্ধনকৃত ট্রলারের ফ্রি ৮০০ টাকা এবং ট্রলারের ফ্রি ২০০ টাকা প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ।

কোথায় থাকবেন 

সুন্দরবন ভ্রমণে যে শীপে বা লঞ্চে ঘুরতে যাবেন সেই শীপেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে । আপনি চাইলে ব্যাক্তিগত ভাবে ভ্রমণ করলে সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে ।

মংলায় থাকার জন্যে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল আছে । পশুর বন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে ।

সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলে এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন ।

সুন্দরবন ভ্রমণ টিপস

  • সুন্দরবনের অনেক জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কিছু কিছু স্থানে টেলিটক নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।
  • শীপ/প্যাকেজ বুকিং এর আগে সেই এজেন্সি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। 
  • শীপে উঠার আগেই প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে উঠুন।
  • নিরাপদ খাবার পানি সাথে রাখুন।
  • ভ্রমণ খরচ কমাতে চাইলে বিশেষ ছুটির দিনগুলো বাদে যান।
  • ট্যুর গাইডের ক্তহা মেনে চলুন।
  • বনে ঢুকার সময় একসাথে থাকুন।
  • সুন্দরবন ভ্রমণে নিরাপ্ততার জন্য সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী সাথে রাখুন।
  • শীতকালে গেলে ভালো মানের শীতের কাপড় নিয়ে যাবেন।
  • কোন শীপে বা লঞ্চে নিয়ে যাবে তা আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন।
  • সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি রাখুন।
  • সুন্দরবনের প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু থেকে বিরত থাকুন।
  • বাজেট নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলে লাক্সারী শীপে ভ্রমণ করতে পারেন।

আমাদের banglatipsbd সাইটে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে । আপনার সুন্দর একটা মতামত দিন আমাদের সাইট সম্পর্কে । আপনাদের মন চাইলে আপনারা আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিয়ে রাখতে পারেন আর হ্যাঁ পারলে আমাদের ইউটুব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন । আবারো ধন্যবাদ জানায় আপনাকে এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *