বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ও সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে অনেকেই ইন্টারেনেটে সার্চ করে থাকেন তাদের জন্যই আজকে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো এই আর্টিকেলে । আশা করি খুব মনোযোগ সহকারে এই রচনাটি পড়বেন ।
বাংলাদেশের কথা আসলে চলে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা । আমাদের বিভিন্ন পরিক্ষায় এই রচনাটি লিখতে হয় । যেহেতু তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি , তাই তাকে নিয়ে গবেষনা ও চর্চা হবে যুগ যুগ ধরে । আসুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই এই রচনাটি ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী
অনেক ভাইবোন ইন্টারেনেটে এসে সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে সার্চ করে থাকেন কিন্তু কেন আপনি এত মহান ব্যাক্তির সাম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চান । আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা নিয়ে এসেছি শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী কাহিনী । আপনি খুব মনোযোগ সহকারে শেষ পর্জন্ত পড়তে থাকুন দেখবেন শেখ মুজিবুর সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারবেন ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা
ভূমিকা: পাকিস্তান সরকারের শাসন এবং শোষণ যখন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি যখন জর্জরিত তখন জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে এগিয়ে এসেছিলেন এক অবিসংবাদিক নেতা । এই নেতা বাঙালি জাতির মুক্তির ডাক দিছেলেন । তার ডাকে পুরো বাঙালী জাতি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামে । শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে ধরে বাঙালি জাতি আলোর পথে এসেছেন ।
আমরা পেয়েছি এক স্বাধীন রাষ্ট্র । বাংলার ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান এক অনবদ্য নাম । তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র শ্রেষ্ঠ নেতা । তিনি তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছিলেন । তিনিই আমাদের বাঙালি জাতির জনক প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাই তো কবির কন্ঠে উচ্চারিত হয় –
যত দিন রবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-গৌরী বহমান ,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার ,
শেখ মুজিবুর রহমান ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা :
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার বর্তমানে জেলা টুঙ্গিপাড়া গ্রাম নামে পরিচিত এই গ্রামে এক সস্ত্রান্ত মুসলিম পরিবারে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহন হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার নাম শেখ লুতফর রহমান । শেখ মুজিবুর রহমানের মাতার নাম সায়েরা খাতুন । শেখ মুজিবুর ছিলেন চার ভাই-বোন । চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান ।
বাবা-মা অনেক ভালোবাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকতেন খোকা বলে । খোকার শৈশবকাল কাটে টঙ্গী পাড়ায় । ১৯২৭ সালে মাত্র ৭ সাত বছরে বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন । শেখ মুজিবুর রহমানে বয়স যখন মাত্র নয় বছর তখন তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন ।
পাবলিক স্কুল থেকে পরে তিনি তার স্থানিয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন । ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন । তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৪ বছর । ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কলকাতায় এক চোখ অপারেশন করতে চলে যান ।
চক্ষুরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারনে তার লেখাপড়া সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকে । ১৯৩৭ সালে চার বছর চক্ষু রোগ থেকে বেরিয়ে এসে তিনি পুনরায় আবার স্কুলে ভর্তি হন । এই চার বছরে তিনি চক্ষু রোগে ভালো হন ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা :
গ্রাম্য পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে আর শিক্ষ জিবন শুরু হয়েছে । গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনাকুলে ভর্তি হন । শেখ মুজিবুর রহমান প্রবেশিকা পরিক্ষায় উত্তির্ন হন ১৯৪২ সালে ।
১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ হতে আই.এ পাস করেন । কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকেই তিনি বি.এ পাস করেন ১৯৪৭ সালে । বি.এ পাস করে তিনি চলে আসেন বাংলাদেশে ।
বাংলাদেশে এসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন । দুখের বিষয় চিনি এই আইন বিভাগে কোর্স শেষ করতে পারেন নি । ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারিরা দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করে সেখানে শেখ মুজিব ঐ ধর্মঘটকে সমর্থন করে ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা :
১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন করেন । তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে । তিন ছেলের নাম শেখ কামাল , শেখ জামাল , শেখ রাসেল এর জনক-জননী ও দুই মেয়ের নাম শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ।
অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী ১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জ মুশনারি স্কুলে পরিদর্শনে এলে শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় তা সারাবার জন্য ও ছাত্রাবাসের জন্য দাবি করেন স্কুল ছাত্রদের পক্ষ থেকে ।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন । এক বছরের জন্য তিনি বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন । এরপর তাকে গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি হিসাবে নিযুক্ত করেন ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনাএর মুজিবের রাজনীতি :
১৯৪২ সালে এস.এস.সি পাস করয়ায় তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাবে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হলে সেই সময় তিনি বেকার হোস্টেলে থাকার সুযোগ পান । এই বছরেই তিনি পাকিস্তানের আন্দোলোনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন ।
১৯৪৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় ভাবে রাজনিতিতে জড়িয়ে পড়েন । সেই সময় তিনি মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন । ১৯৪৪ সালে তিনি কুষ্টিয়ায় আনুষ্ঠীক ভাবে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন এবং তখন তিনি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে থাকেন ।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক জিএস নির্বাচিত হন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বি.এ পাস করেন । এই সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববঙ্গের মানুষের উপর শাসকদের শোষণ ও শাসন চলতে থাকে ।
ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধ ততপরতায় অগ্রনি ভুমিকা পালন করেন ত শেখ মুজিবুর । ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলে ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন ।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিম উদ্দিন আইন পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উদুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে বলে ঘোষণা দিলে তাতক্ষণীক ভাবে শেখ মুজিবুর এর প্রতিবাদ জানান । খাজা নাজিম উদ্দিনের বক্তব্য পুরো পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ।
শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলোণেড় প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য কর্মততপতা শুরু করে । শেখ মুজিব ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগদান করে । ২ মার্চ ভাষা প্রসঙ্গে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন কে সংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মীদের সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত করেন ।
এ কে ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শেখ মুজিবুর প্রস্তাব গ্রহণ করেন । ২ মার্চ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । ১১ মার্চ সংগ্রাম পরিষদ বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সাধারন ধর্মঘট আহবান করেন ।
১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালন করলে শেখ মুজিব সহ তার কর্মীদের সাথে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার করেন । শেখ মুজিবুর গ্রেফতার হয়ায় সারা দেশে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে জয়ার নেমে আসে ।
মুসলিম লীগ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে শেখ মুজিবুর রহমান সহ গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্র নেতৃবৃন্দকে মুক্তি করতে বাধ্য হন । ১৫ মার্চ শেখ মুজিবুর মুক্তি লাভ করেন । শেখ মুজিব মুক্তি লাভের পর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র জনতার সভার আয়োজন করা হয় ।
শেখ মুজিবুর রহমান এই সভায় সভাপতিত্ব পালন করেন । এই সভায় পুলিশের হামলায় ছাত্রসমাজ ছত্রভোজ্ঞ হয়ে যায় । পুলিশের হামলার কারণে ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিবাদে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের আহবান জানায় । ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয় ।
পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় । তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার সময় থেকেই পাকিস্তানের শাসকদের শোষনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান ।
এই সংগ্রাম করার কারনে পাকিস্তান সরকার ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেন । ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগেড় জন্ম হলে সেই সময় তিনি ছিলেন যুগ্নসম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ।
কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ শেখ মুজিবকে অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । শেখ মুজিব এই অন্যায়কে নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে । ফলে শেখ মুজিবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিকৃত করে ।
জুলাই মাসের শেষের দিকে মুক্তিলাভ করেন । জেল থেকে বেরিয়েই দেখেন দেশে বিরাজমান প্রকট খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন । সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হন ও পরে মুক্তি পান ।
অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে আওয়ামি মুসলিম লীগের সভায় নুরুল আমিন পদত্যাগ দাবি করেন । পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলি খানের আগমন উপলক্ষে আওয়ামি মুসলিম লীগ বিক্ষপ মিছিল বের করেন । এই মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কারনে পরের দিন ১৪ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় । এই গ্রেপ্তার করার ফলে তাকে প্রায় দুই বছর পাঁচ মাসের মতো জেল খাটতে হইছে ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা বঙ্গবন্ধু উপাধি:
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দেশের সুসন্তানদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপাধি দিয়ে আসা হচ্ছে । যেমন চিত্তরঞ্জনকে দেওয়া হয়েছে দেশবন্ধু , একে ফজলুল হককে দেওয়া হয়েছে শেরে বাংলা খেতাব । বঙ্গবন্ধু শব্দের অর্থ হলো বাংলার বন্ধু ।
বন্ধু তাকেই বলা হয় যে মানুষের প্রয়োজনে কথা বলতে পারে কিংবা তা মেটানোর চেষ্টা করে থাকে ও মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকে । যখন পূর্ব পাকিস্তানের বড় বিপদ আসে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান আর এই জন্য বাংলার মানুষ তাকে বঙ্গবন্ধু নামে উপাধি দিয়েছে ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ভাষা আন্দোলন:
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি মাসে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দি অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহবান জানান ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে । ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বংলার দাবিতে ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে । এই মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ করেন গুলি করেন । সে সময় পুলিশের গুলিতে সালাম , বরকত, রফিক ,জব্বার, শফিউর নাম না জানা অনেকেই শহিদ হন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় থাকা অবস্থায় এক বিবৃতিতে ছাত্র মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষেণের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান । এ সময় একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যাহত করে রাখেন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানা থেকে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখার কারণে তাকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর জেলখানায় নিয়ে জাওয়া হয় । ডিসেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিকিং এ বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগদান করে ।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই মাসে । পাকিস্তান গণপরিষদের সাধারন নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য মাওলানা ভাসানি , এ কে ফজলুল হক ও শহিদ সোহরাওয়ার্দির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হন । ১৪ নভেম্বর দলের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয় এবং এতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব গ্রহন করা হয় ।
১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭ টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩ আসন । ১৪৩ টি আসন পেয়েছেন আওয়ামি লিগ । বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ মে প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন । কেন্দ্রিয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বাতিল করে দেন ৩০ মে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং তিনি গ্রেফতার হন । ২৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পান ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৫৫ সালের জুন মাসের ৫ তারিখ । আওয়ামি লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পুর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করেন ।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্জকারী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে , পুর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবে । ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন ,
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা বাংলা অনুবাদ
স্যার আপনি দেখবেন ওরা পূর্ব বাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায় । আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে , আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন । বাংলা শব্দের একটি নিজস্ব ইতিহাস আছে । আছে এর একটি ঐতিহ্য ।
আপনারা এই নাম আমাদের জনগনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবর্তন করতে পারেন । আপনারা যদি ঐ নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে আমদের বাংলায় আবার যেতে হবে এবং সেখানকার জনগনের সাথে কথা বলতে হবে তাদের কে বলতে হবে নাম পরিবর্তন কে মেনে নিবে কি না ।
এক ইউনিট প্রসঙ্গে গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে । আপনার প্রসঙ্গ কি এখনই কেন তুলতে চান । বাংলা ভাষাকে , রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে কি হবে । যুক্ত নির্বাচনী এলাকা গঠনের প্রসঙ্গটা কি সমাধান ।
আমাদের স্বায়ত্তশাসন সম্বন্ধেই বা কি ভাবছেন । পূর্ব বাংলার জনগন অন্যান্য প্রসঙ্গ গুলোর সমাধানের সাথে এক ইউনিট প্রসঙ্গটিকে বিবেচনা করতে প্রস্তুত । তাই আমি আমার ঐ অংশের বন্ধুদের কাছে আবেদন জানবো তারা যেন আমাদের জনগনের রেফারেন্ডাম কিংবা গন ভোটের মাধ্যমে দেয়া রায়কে মেনে নেন । ২১ অক্টোবর আওয়ামি মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম পরিবর্তন করে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ।
১৯৫৬ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামি লিগের নেতৃবৃন্দ মুখ্যমন্ত্রির সাথে সাক্ষাত করে খসড়া শাসন তন্ত্রে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে বিষয়টি অন্তভুক্তির দাবি জানায় । ১৪ জুলাই আওয়ামি লীগের সভায় প্রশাসনে সামরিক বাহিনাইর প্রতিনিধিত্বের বিরোধীতা করে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহন করে ।
এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ।
চকবাজার এলাকায় পুলিশ মিছিলে গুলি চালাতে তিন জন নিহত হন । ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোয়ালীশন সরকারের শিল্প, বানিজ্য, শ্রম , দুনিতি দমন ও ভীলেজ এইড দপ্তরের দায়িত্ব লাভ করেন ।
সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন । ৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীন ও সোভীয়েত ইউনিয়নে সরকারি সফর করেন ।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারি করে রাজনিতি নিষীদ্ধ ঘোষনা করে । ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে এবং একের পর এক মিথ্যা মামলায় তাকে হয়রানি করা হয় । প্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ১৪ মাস জেলখানায় থাকার পর তাকে মুক্তি করে দেন কিন্তু সে জেলগেট পার না হতেই আবার গ্রেফতার করেন ।
১৯৬১ সালের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রিট আবেদন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি করা হয় । সামরিক শাসন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশিষ্ট ছাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বারা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেন । ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পান ।
২৫ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ আইয়ুব খানের মৌলীক গনতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দেন । ৫ জুলাই পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইয়ুব খান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ।
২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাহোড় জাণ ,এখানে শহিদ সোহরাওয়াদির নেতৃত্বে বিরোধি দলিয় মোর্চ জাতীয় গনতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠীত হয় । অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে শহিদ সোহরাওয়াদির সাথে সারা বাংলা সফর করেন ।
১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী অসুস্থ হয়ে পড়েন । চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাথে পরামর্শের জন্য লন্ডনে যান । ৫ ডীসেম্বর সোহরাওয়ার্দী বৈরুতে ইন্তেকাল করেন ।
১৯৬৪ সালে জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় আওয়ামি লীগকে পুনরুজ্জিবিত করে । এই সভায় দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি সাধারন মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় প্রস্তাব গ্রহন করা হয় ।
এই সভায় মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন । ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে সর্বদলিয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় ।
সে সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দাঙ্গার প্রতিরোধ কমিটি গঠীত করা হয় । দাঙ্গার পর আইয়ুব খান বিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ হন । রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৪ দিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতা অ আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে মামলা দায় করেন । এক বছর জেল হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের । পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার থেকে তার মুক্তি হয় ।
১৯৬৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে লাহোরে বিরোধী দল সমুহের জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচিত কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই প্রস্তাবিত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ।
১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামি লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলার গণ সংখ্যা সফর শুরু করেন । এ সময় সিলেট , ময়মনসিনহ ও ঢাকায় বার বার গ্রেফতার করা হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বছরের প্রথম তিন মাসে আট বার গ্রেফতার হন । নারায়ণগঞ্জে পাটকল শ্রমিকদের জনসভায় বক্তৃতা শেষে তাকে আবার গ্রেফতার করেন দিনটি ছিল ৮ মে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে ৭ জুন সারাদেশে ধর্মঘট পালিত হয় । এসময় ঢাকা , নারায়ণগঞ্জ ও টুঙ্গিতে পুলিশের গুলিতে অনেক জন্য নিহত হন ।
১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালিকে সেনা ও সি এস পি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগের দায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে । ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থেকে মুক্তি দিলে জেলের গেট পার না হতেই তাকে আবার গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে আটক করে রাখা হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোপ মিছিল শুরু করেন । ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের বিচার কার্জ শুরু করেন ।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে ৬ দফাসহ আরোও ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রিয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় । কেন্দ্রিয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ।
এই আন্দোলনই গণআন্দোলনে পরিণত হয় । পরে ১৪৪ ধারা জারি ও কার্ফু ভঙ্গ , পুলিশ ইপিয়ার ,এর গুলিবর্ষণ ,বহু হতাহতের মধ্যে দিয়ে গণ অভ্যুস্থানে রুপ নিলে আইয়ুব সরকার ১ ফেব্রুয়ারি গোলটেবীলে বৈঠকের আহবান জানায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তিদান করা হবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্যারোলে মুক্তিদান প্রত্যাখ্যান করেন কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি জনগনের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রিয় সরকার আগরতলা ষড়জন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধ্নার আয়োজন করা হয় । প্রায় ১০ লক্ষ ছাত্র জনতার এই সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভুষীত করা হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ভাষনে ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি পুর্ন সমর্থন জানান । ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাওয়ালপিন্ডীটে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামি লিগের ৬ দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা উপস্থাপন করে বলেন গন অসম্ভোষ নিরসনে ৬ ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই । পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি গোলটেবিল বৈঠক ত্যাগ করে আসেন ।
১৪ মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাম্রিক শাসন জারির মাধ্যেমে ক্ষমতাসিন হন । ২৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিন সপ্তাহের সাংগঠনিক সফরে লন্ডন যান ।
৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়াদি মৃত্যুবার্ষিকি উপলক্ষ্যে আওয়ামি লীগের আলোচণা শোভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পুর্বে বাংলার নামকরণ করেন বাংলাদেশ । তিনি বলেন এক সময় এসেশের বুক হইতে মানচিত্রের পৃষ্ঠা হৈটে বাংলা কথাটির সর্বশেষে চিহ্নটূকূও চিরতরে মুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হইছে ।
শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কিছু নামের সাথে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না । জনগনের পক্ষ হইতে আমি ঘোষনা করিতেছি , আজ হইতে পাকিস্তানের পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পুর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ।
১৯৭০ সালে জানুয়ারির ৬ তারিখে পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন । পহেলা এপ্রিল আওয়ামী লীগ কার্জকারী পরিষদের সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে । ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফার প্রসঙ্গ আওয়ামীলিগ কে নির্বাচিত করার জন্য দেশবাসির প্রতি আহবান জানায় ।
১৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে নৌকা প্রতীক পছন্দ করে ঢাকার ধোলাইখালের প্রথম নির্বাচনী জনসভার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেন । ২৮ অক্টোবর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বেতার টিভি ভাষনে ৬ দফা বাস্তাবায়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসির প্রতি আহবান জানায় ।
১২ নভেম্বরের প্রচারনা বাতিল করে দুর্গত এলাকায় চলে যান এবং আর্ত-মানবতার প্রতি পাকিস্তানি শাকদের উদাসিনের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোর্কি উপদ্রুত মানুষের ত্রানের জন্য বিশ্ববাসির প্রতি আহবান জানায় ।
৭ ডিসেম্বরে সাধারন নির্বাচনে আওয়ামি লীগ নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । আওয়ামী লীগ তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০ টি আসনের মধ্যে আওয়ামি লীগ পায় ৩০৫ টি আসন ।
১৯৭১ সালে জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে রেসকোর্স জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহন পরিচালনা করেন । আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যরা ৬ দফা ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগনের প্রতি আনুগত্য থাকার শপথ গ্রহন করে ।
৫ জনুয়ারি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সর্বাধিক আসন লাভকারি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্র কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালীষোণ শোড়কাড় গঠনে তার সম্মতির কথা ঘোষনা করে । জাতীয় পরিষদ এক বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্লামেন্টারি দলের নেতা নির্বাচিত হয় ।
২৮ জানুয়ারি জুলফিকার আলি ভুট্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাথে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন । তিনদিন বৈঠকের পর আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায় । ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহবান করেন ।
১৫ ফেব্রুয়ারি ভুট্র ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক বয়কটের ঘোষনা দিয়ে দুই প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দলের প্রতি ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানায় । ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে জনাব ভুট্রোর দাবির তিব্র সমালোচণা করে বলেন ভুট্র সাহেবের দাবি সম্পুর্ন অজৌক্তিক ।
ক্ষমতা কেবল মাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লিগের কাছে হস্তান্তর করতে হবে । এই ক্ষমতার মূল মালিক এখন পূর্ব বাংলার জনগন । পহেলা মার্চ ইয়াহিয়া খান অনিদিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষনা দিলে সারা বাংলা প্রতিবাদের ঝড় গড়ে ওঠে ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ কার্জকারি পরিষদের জরুরি বৈঠকে ২ মার্চ সারাদেশ ব্যাপি হরতাল চলে । ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্ট এর প্রতি দাবি জানায় ।
৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন , এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা । এই ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে শৃঙ্খল মুক্তির আহবান জানিয়ে ঘোষনা করেন ।
রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ । প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল । যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে । শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার আহবান জানায় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়া খানের সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন ।
রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ জেট অপর দিকে ধানমন্ডী ৩২ নং সড়ক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ জেট বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মেনে চলতেন । অফিস-আদালত , স্কুল-কলেজ , গাড়ি ,শিল্প-কারখানাসহ নির্দেশ মেনেছে ।
ইয়াহিয়ার সব নির্দেশ অমান্য করে অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার মানুষের সেই অভুতপুর্ব সাড়া ইতিহাসে বিরল ঘটনা । মূলত ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন ।
১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গ মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয় । আলোচনার জন্য জনাব ভুট্র ও ঢাকায় আসেন । ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্র আলোচনা হয় । ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হবার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন ।
২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনি ঝাপিয়ে পড়েন । আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , পিলখানা রাইফেল সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার । ২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা বাংলা অনুবাদ
সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা , আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন । আমি বাংলাদেশের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যা তোমাদের হাতে আছে তার দ্বারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দখলদার সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হবে । যতক্ষণ না পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ ব্যক্তি বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত হবে এবং যতক্ষণ না চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে, তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে । এই ঘোষনা বাংলাদেশের সর্বত্র ট্রান্সমিটারে প্রেরিত হয় ।
হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য বাঙালি সামরিক ও বেসামরিক যোদ্ধা , ছাত্র , শ্রমিক , কৃষকসহ সর্বস্তরের জনগনের প্রতি আহবান জানায় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহবান বেতার যন্ত্র মারফত তাতক্ষনিক ভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারাদেশে পাঠানো হয় ।
রাতে এই বার্তা পেয়ে চট্রগ্রাম , কুমিলা ও যশোর শেণাণীবাশে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । চট্রগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা প্রচার করে গভীর রাতে । স্বাধিনতার ঘোষনা দেবার অপরাধে পাকিসস্তান সেনাবাহিনি ১-১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডীর ৩২ নং বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং ২৬ মার্চ তাকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয় ।
২৬ মার্চ চট্রগ্রাম স্বাধিন বেতার কেন্দ্র থেকে চট্রগ্রামের আওয়ামি লীগের নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধিনতার ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেন । ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবি সরকার গঠিত হয় । অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রি নির্বাচিত হন ।
১৬ ডিসেম্বর প্রাবসি বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনায় মুক্তিজুদ্ধ শেষ করে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্নসমর্পনের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিজ্য অর্জিত হয় । বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে । তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লায়াল্পুর সামরিক জেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচার করে তাকে দেশদ্রোহি ঘোষ্না করে মৃত্যুদন্ড প্রধান করে ।
বিভিন্ন দেশে ও বিশ্বের কাছে মুক্তিকামী জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানায় । ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানের দাবি জানায় ।
ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয় , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি । তিনি বাংলাদেশের স্থপতি কাজে পাকিস্তানের কোন অধিকার নেই তাকে বন্দি করে রাখার । বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বহু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেছেন ।
১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে ৮ তারিখে পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি করে দেয় । জুলফিকার লাই ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন । সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন পাঠানো হয় ।
জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সাথে সাক্ষাত করেন । লন্ডন থেকে ঢাকা ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিল্লি থেকে আসেন । বিমানবন্দর ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি ও প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানায় ।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ তারিখে ঢাকায় আসলে তাকে অবিস্মরনিয় সংবর্ধ্না জ্ঞাপন করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমান বন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে লক্ষ জনতার সমাবেশ থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশ্য ভাষন দেন ।
১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন । ৬ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার আমন্ত্রনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত যান । ২৪ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেন ।
পহেলা মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষনা করেন । ৩০ জুলাই লন্ডনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিত্তকোষে অস্ত্রোপাচার করা হয় । ১০ অক্টোবর বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরী পুরস্কারে ভূষিত করে।
৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ৭ মার্চ ১৯৭৩ ঘোষণা করে । ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার মুক্তিজোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের কথা ঘোষনা করেন । ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষর করেন । ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয় ।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৯৩ আসন পায় । ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ , সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়য়ে ঐক্য-ফ্রন্ট গঠিত হয় । ৬ সেপ্টেম্বর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলন যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলজেরিয়া যান । অক্টোবর ১৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করেন ।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় দলে যোগদানের জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নেতাদের প্রতি আহবান জানান । বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশিলতা কমিয়ে বাঙালি জাতিকে আত্ননির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনিয়তা উপলদ্ধি করেন ।
তাই স্বাবলম্বিতা অর্জনের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালাকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে । নতুন আশার উদ্দীপনা সুফল মানুষের ঘরে পৌছিয়ে দেবার জন্য দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অগ্রসর হতে শুরু করে ।
১৫ আগস্ট ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষি অফিসার বিশ্বাস ঘাতকের হাতে নিহত হন ।
সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী মহীয়শী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লে শেখ কামাল , শেখ জামাল কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ,দুই পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানর ভাই শেখ নাসের , ভগ্নীপতি ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত , আরিফ সেরনিয়াবাত , দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু , ভ্রাতুষ্পূত্র শহীদ সেরনিয়াবাত আরজু মনি ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানর নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নাঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্নিয়স্বজনকে ঘাতকরা হত্যা করে ।
১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হবার পর দেশে সামরিক শাসন জারি হয় । গণতন্ত্রকে হত্যা করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয় । শুরু হয় হত্যা , ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি । কেড়ে নেওয়া হয় জনগনের ভাত ও ভোটের অধিকার ।
জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমোণীতী অর্ডীন্যান্স নামে এক কুখ্যাত কালো আঈণ সংবিধানে সংযুক্ত করে সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করে খুনিদের বিদেশি অবস্থিত বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কার করা হয় । ১৯৯৬ সালে ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদ কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডীন্যান্স বাতিল করে । ১৫ আগস্টের এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি পালন করে ।
উপসংহার: বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা ও অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তিনি আর আজ আমাদের মাঝে নেই । কিন্তু তার মহান আদর্শে বাঙালি জাতির জীবনে চির অম্লান হয়ে থাকবে । কবি বলে গেছেন ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও মুজিবাদর্শের মৃত্যু নেই । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদর্শ চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকুক এই প্রত্যাশা সকলের মাঝে । বাংলাভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শস্কর রায় বলেগেছেন –
যত কাল রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান
আমাদের banglatipsbd সাইটে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে । আপনার সুন্দর একটা মতামত দিন আমাদের সাইট সম্পর্কে । আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কোন প্রকার হেল্প নিতে চান তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকেন । আপনাদের মন চাইলে আপনারা আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিয়ে রাখতে পারেন আর হ্যাঁ পারলে আমাদের ইউটুব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন । আবারো ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ।