পরিক্ষায় শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট আসার সম্ভবনা খুবই বেশি । পরিক্ষায় খাতায় একটি না একটি রচনা থাকবেই তার মধ্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্র । আপনি যদি শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন । আজকে আমরা শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট নিয়ে খুব সহজ ভাষায় আলোচনা করছি ।
আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যদি শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন । আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে একবার পড়েন তাহলে একবারই আপনার মুখস্ত হয়ে যাবে এই রচনাটি যা আর কখনো ভুলে যাবেন না ।
শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট
ভূমিকা : কর্মই জীবন । সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয় । ছোট পিপড়ে থেকে বিশাল হাতি পর্যন্ত সবাই কেই পরিশ্রম করতে হয় । পরিশ্রম দ্বারাই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা করেছে । পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে ।
বহু বছরের শ্রম ও সাধনা দ্বারা পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে । বলা যায় মানুষ ও সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতির মূলে রয়েছে পরিশ্রমের অবদান । জ্ঞানীর জ্ঞান বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার , ধর্মসাধকের আত্নোপলদ্ধি , ধনীর ধনৈশ্বর্য ও যোদ্ধার যুদ্ধে জয় লাভ সব কিছুই শ্রমলদ্ধ ।
অলসতার গহীন পাথরে গা ভাসিয়ে না দিয়ে কোনো কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখার নামই শ্রম । পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই এবং যথার্থ পরিশ্রমী ব্যক্তি তার জীবনে সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে । তাই কবির ভাষায় বলতে হয় –
শ্রমের উৎস : পৃথিবীর সকল কর্মই শ্রম সাপেক্ষ । কথায় বলে – শ্রম ব্যতীত শ্রী হয় না । পরিশ্রম না করে যদি কেউ ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বসে থাকে । অলীক স্বপ্নে বিভোর থাকে তাহলে তার জীবনে সুখ বা সাফল্য কোনটিই আসে না । শ্রম জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা ।
শ্রম কী : শ্রমের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেহনত , দৈহিক খাটুনি । সাধারণত যেকোনো কাজই হলো শ্রম । পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার । পরিশ্রমের দ্বারাই গড়ে উঠেছে বিশ্ব ও মানব সভ্যতার বিজয় স্তম্ভ । পরিশ্রম ছাড়া কেউ কখনো শান্তি খুঁজে পাবে না ।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের ধরন : মানব জীবন মানেই কর্মময় জীবন । এখনে শ্রম ছাড়া টিকে থাকা কষ্টকর । ব্যক্তিগত , সমষ্টিগত , জাতীয় সকল উন্নতির মূলে রয়েছে শ্রম । যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী , সে জাতি তত বেশি উন্নত । জ্ঞানীর জ্ঞান , সাধকের সিদ্ধি , ধনী ধন , বিজ্ঞানীর আবিষ্কার , চাষীর শস্য সবই শ্রমের প্রতিদান ।
শ্রমের শ্রেণীবিভাগ : শ্রম দুই প্রকার । মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম । শিক্ষক , ডাক্তার , বৈজ্ঞানিক , সাংবাদিক , অফিসের কর্মচারী শ্রেণীর মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকেন সেটিকে বলে মানসিক শ্রম । আবার কৃষক শ্রমিক , তাঁতি , জেলে , মজুর শ্রেণির মানুষের শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম ।
পেশা বা কাজের ধরণ অনুসারে এক এক শ্রেণির মানুষের পরিশ্রম এক এক ধরনের হয় । তবে শ্রম শারীরিক বা মানসিক যাই হোক না কেন উভয়ের মিলিত পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা । জাতীয় উন্নয়নের এদের অবদানই সব থেকে বেশি ।
শ্রমের আবশ্যকতা : পার্থিব জীবনে মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে সাফল্যজনক ভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন কঠোর শ্রম সাধনা । মানব জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয় । কেউ কারো অন্নের সংস্থান করে দেবেন না । নিজের অন্ন নিজেকে জোটাতে হয় । এজন্য বেঁচে থাকার তাগিদে পরিশ্রম করতে হবে ।
শ্রমের গুরুত্ব : সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই । অলস ও কর্মবিমুখ ব্যক্তির জীবনে চরম দুঃখ দারিদ্র্য ও ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছুই থাকে না । পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যেমন শ্রমের প্রয়োজন তেমনি পরলোকের পাথেয়ও তেমনি শ্রম সাপেক্ষ ।
ছাত্রদের ক্ষেত্রে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই । অলস ও শ্রম বিমুখ ছাত্র যত মেধাবীই হোক না কেন । জীবনে কোন ক্ষেত্রেই সে সফলতা লাভ করতে পারবে না । পৃথিবীতে একমাত্র পরিশ্রমীরাই জীবনে উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন । প্রানী মাত্রই কোনো কাজ করে জীবন ধারণ করে ।
ব্যক্তিগত শ্রম ও জাতীয় উন্নয়ন : ব্যক্তির উন্নয়নের ওপর জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল । আবার ব্যক্তির উন্নয়ন পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীল । শ্রম বিমুখ ব্যক্তি জাতির বোঝা । অলস ব্যক্তি নিজে যেমন সমস্যায় জর্জরিত থাকে তেমনি জাতীয় উন্নয়নও বাঁধা গ্রস্ত করে । তাই ব্যক্তি জাতি ও শ্রম এক সূত্রে গাথা ।
শ্রমের প্রয়োজনীয়তা : মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা । তার এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় কঠোড় পরিশ্রমের মাধ্যমে । তাই মানব জীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । কর্মবিমুখ অলস মানুষ কোনো দিন উন্নতি লাভ করতে পারে না ।
পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি কল্পনা মাত্র । জীবনে আত্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে নিরলস পরিশ্রম দরকার । পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত । তাই ব্যক্তি গত ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মানুষকে পরিশ্রমী হতে হব । একমাত্র পরিশ্রমই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে ।
শ্রমের গুণ : শ্রমই পাহাড় ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি করে । বন কেটে তৈরি করে বসতি । শ্রম গরিবকে ধনী , অসভ্য বর্বর জাতিকে রূপান্তরিত করে সভ্য জাতিকে । মানুষের ভাগ্য গঠনের প্রধান হাতিয়ার হলো পরিশ্রম । পরিশ্রমের ফলে মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে পারে ।
কায়িক শ্রম সম্পর্কে আমাদের মনোভাব : আমাদের দেশে কায়িক পরিশ্রমকে অমর্যাদাকর ও অপমানকর হিসেবে গণ্য করা হয় । তাই শ্রমের কথা বা কাজের কথা উঠলেই আমাদের মনে সম্মান হাই হওয়ার আশঙ্কা জেগে উঠে । অথচ উন্নত বিশ্বে কায়িক শ্রমকে মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয় ।
উন্নত দেশ সমূহে যেখানে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব চাষী , কলকারখানার শ্রমিক , কুলি মজুররা পালন করে সেখানে লোক নিন্দার ভয়ে আমরা নিজেদের গুটিয়ে রাখি । উন্নত দেশে কাজের প্রকৃতি বিচার করে সম্মান আর অসম্মান নির্ধারিত হয় না ।
উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা : চীন , জাপান , আমেরিকা , ইংল্যান্ড , রাশিয়া , ফ্রান্স ইত্যাদি উন্নত দেশসমূহ কঠোর শ্রমের বিনিময়ে মর্যাদা আসনে অধিষ্ঠত হয়েছে । সেসব দেশে দৈহিক পরিশ্রমকে সমীহ করা হয় । আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সঃ নিজে হাতে ঘর ঝাড়ু দিতেন এবং জুতা সেলাই করতেন । জর্জ ওয়াশিংটন , আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ ছিলেন শ্রমনিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।
শ্রমের মর্যাদা : মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন । জীবন ধরনের তাগিদে মানুষ নানা কর্মে নিয়োজিত হয় । কৃষক ফসল ফলায় , তাঁতি কাপড় বোনে , জেলে মাছ ধরে , শিক্ষক ছাত্র পড়ান , ডাক্তার চিকিৎসা করেন , বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন ।
এরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে । পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোট নয় । আর্থ সামাজিক পদমর্যাদায় হয় তো সবাই সমান নয় । কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা , মনন , ঘাম ও শ্রমের সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে চলেছে । তাই সকলের শ্রমের প্রতি আমাদের সম্মান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত ।
উন্নত বিশ্বে কোন কাজকেই তুচ্ছ মনে করে না । সমাজের প্রতিটি লোক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে । তাই চীন , জাপান , কোরিয়া , রাশিয়া , ইংল্যান্ড ,আমেরিকা , ফ্রান্স , কানাডা প্রভৃতির মত দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে । আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না ।
তার ফলে আজো সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশের অধিবাসী দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা চরম দারিদ্রের মধ্য বসবাস করি । বিশিষ্ট ইংরেজ সাহিত্যিক কার্লাইল শারীরিক পরিশ্রমের পবিত্র বলে অভিহিত করেছেন । কথায় বলে বসে বসে খেলে রাজার রাজত্বেও কুলায় না । তখন রিক্তহস্ত হয়ে মর্যাদাহীন হয়ে পড়তে হবে । ফলে যে শ্রমের মর্যাদা দেবে সে সম্মানিত হবে ।
শ্রম ও স্বাস্থ্য : পরিশ্রম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে । নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । পরিশ্রম না করলে ব্যায়াম করতে হয় আর ব্যায়াম হলো কৃত্রিম শ্রম । নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে পরিশ্রম করলে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না ।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি : সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না । জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয় না । সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে । পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে । যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে জীবন সংগ্রামে তারই হচ্ছে জয় ।
কর্মের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে । কর্ম হীন ব্যক্তি সমাজের বোঝা স্বরুপ । অন্যদিকে শ্রমশীল তাই মানব জীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি । আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই ।
উপসংহার : পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয় , সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক । মানব সভ্যতার উন্নতির অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য । আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক । সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের । তাই কোনো প্রকার শ্রম থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না । শ্রমের বিজয় রথে চড়ে আমাদের উন্নত সভ্যতার সিংহ দ্বারে পৌছাতে হবে ।
পৃথিবী একটি বিরাট কর্মক্ষেত্র । এ কর্মক্ষেত্রে নিজেদের কে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই । একমাত্র পরিশ্রমই সুখ আনে সমৃদ্ধি আনে জাতির ভাগ্যেনয়ন ঘটায় ।
আপনি যদি উপরের শ্রমের মর্যাদা রচনা মনোযোগ সহকারে পড়ে আর এটি যদি আপনি পরিক্ষার খাতায় লেখেন তাহলে আপনি সবার চেয়ে ভালো নাম্বার পাবে মানে আপনি ফুল মার্ক পাবেন । আমাদের এই রচনাটি আপনাদের কেমন লাগছে কিংবা এই রচনা সম্পর্কে আপনার মতামত অবশ্যই জানাবেন ।
আমাদের banglatipsbd সাইটে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে । আপনার সুন্দর একটা মতামত দিন আমাদের সাইট সম্পর্কে । আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কোন প্রকার হেল্প নিতে চান তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকেন । আপনাদের মন চাইলে আপনারা আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিয়ে রাখতে পারেন আর হ্যাঁ পারলে আমাদের ইউটুব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন । আবারো ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ।