শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কিংবা চিকিৎসা মতো বিষয় নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি । ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নিবেন , বাসায় থাকবেন না হাসপাতালে যাবেন এই বিষয় নিয়ে সম্পুর্ণ আলোচনা করা হয়েছে । ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ । এডিস মশার কামড়ে মানুষদের ডেঙ্গু রোগ এ আক্রান্ত হয় ।
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আনাচে কোনাচে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগ । এই ডেঙ্গু রোগের আক্রান্তদের মধ্যে সব থেকে বড় একটি অংশর বিস্তার পড়েছে শিশুদের উপরে । শিশুরা সাধারণত তাদের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কের সচেতনা কিংবা সতর্ক না থাকার কারণে তাদের উপরে এই ডেঙ্গু রোগের প্রভাব বড় মানুষদের চাইতে কঠিন ভয়াবহ প্রভাবের আশষ্কা থাকে ।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশুদের ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচাতে চাইলে আপনাকে শুরুতেই এমন কিছু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের মশা না কামড়ায় । কারণ এই ডেঙ্গু রোগ বিশেষ একটি এডিস মশার কামড়ে শিশুদের হয়ে থাকে । এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ শিশু ডাক্তার আবু কালামের কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন ।
শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে প্রথম পরামর্শ দিয়েছেন যে , এডিস মশার উৎস ধ্বংস করে দিতে হবে । এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির পরিষ্কার স্থির পানিতে জন্মে থাকে । আমরা যদি এই এডিস মশার বংশ ধ্বংস করে দিতে পারি তাহলে আমরা আমাদের শিশুদের ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করতে পারবো ।
এই এডিস মশাগুলো ফুলের টব , গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা পানিতে এই মশা ডিম পারে । তাই এডিস মশার লাভা জন্ম নিতে পারে এমন সকল স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেই সকল স্থান গুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । ঘর বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।

শিশুদের দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে । বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সব সময় মশারির ভিতরে রাখতে হবে । এই বিষয় নিয়ে ডাক্তার আরো কড়া করে বলেছেন যে কোন শিশু যদি হাসপাতালে অন্য যে কোন রোগের জন্য চিকিৎসা নিতে আসুক না কেন সে যেনো অবশ্যই মশারির ভেতরে থাকে
ডেঙ্গু আক্তান্ত যে কাউকে এডিস মশা কামড়ে পরে অন্য যেকোন শিশুকে যদি কামড় দেয় তাহলে সেই শিশুর গায়েও এই ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে । শিশুরা যে সময়টায় বাইরে থাকবে সেই সময় যেন তাদের শরীরে মসকুইটো রেপেলেন্ট কিংবা মশা নিরোধীকরণ স্প্রে , ক্রিম কিংবা জেল দিতে হবে । এইভাবে কয়েক ঘন্টা পর পর দিতে হবে ।
মশার কামড় থেকে আরেকটি ব্যবস্থা নিতে পারেন । যেমন শিশুদের ফুল হাতা ও ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখতে পারেন । তবে মশা প্রতিরোধ অয়ারোসল , মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশু থেকে শুরু করে সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে । এই ক্ষতিকর বিষয়গুলোর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব বা ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প ও ইলেকট্রিক কয়েল এবং মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে মশার কামড় থেকে নিরাপতে থাকতে পারেন ।
শিশুর মা যদি কোন কারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে সেই মায়ের দুধ শিশুকে খাওয়াতে পারে কারণ বুকের দুধের কোন প্রকার প্রভাব ফেলে না । কাজেই আক্তান্ত অবস্থায় মা তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারে এতে কোন প্রকার সমস্যা হবে না ।
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশা জনিত ভাইরাস সংক্রমণ । এডিস মশার কামড়ে এই ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে । মানুষ জাতি শুধু মাত্র এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । এই ডেঙ্গু রোগে আমরা তখনই আক্রান্ত হই যখন কোন মশা সংক্রমিত কোন ব্যক্তিকে কামড়ে তারপরে ভাইরাস বহন করার সময় একজন অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে থাকে ।
আপনারা হয় তো জেনে থাকবেন দিন দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে । এই গত রোববার ৯ জুলাই ঠিক বিকেল বেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পাঠানো একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানা জায় যে , সবশেষ ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরোও ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে । এটি যত দিন যাচ্ছে তত বেড়েই চলছে ।
গত বছরের চেয়ে এই বছরে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড করে ফেলেছে । এর আগে গত মঙ্গলবার ৪ জুলাই সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল । এ নিয়ে চলতি বছরে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগের মোট ৭৫ জনের মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ।
ডেঙ্গু জ্বর যাকে একবার ধরেছে সেই ব্যক্তিকে একবারই বলা হয় ডেঙ্গু । একটি মশা- বাহিত ভাইরাল সংক্রমণ যা বিশ্বের অনেক অংশে , বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে একটি মারাক্তক স্বাস্থ্য হুমকির সৃষ্টি হয়ে পড়ে । এটি আনুমানিক যে প্রতি বছর ৩৯০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ।
ডেঙ্গু যে একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা আমরা ইতি মধ্যে বুঝতে পেরেছি । কিন্তু এই এসিড মশা কখন মানুষদের কামড়ায় । এই এসিড মশা সাধারণত মানুষদের ভোরবেলায় ও সন্ধ্যার পূর্বে কামড়ায় । এই চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায় তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্তক হতে পারে । এই এসিড মশার উৎপত্তি সাধারণত বর্ষাকালে এই রোগের প্রকোপ সব থেকে বেশি বাড়িয়ে থাকে ।

এ বছরের ডেঙ্গু অধিক শক্তিশালী হয়েছে । চিকিৎসকদের মতামতে জানা জায় যে এ ডেঙ্গুতে তীব্র জ্বর , মাথাব্যথা , গায়ে র্যাশ ও বমির লক্ষণ সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে না । কারণ ডেঙ্গু হলে অল্পতেই জ্বরেই হার্ট , কিডনি ও বেইন আক্রান্ত হয়ে পড়তেছে । এর ফলে ডেঙ্গু রোগী খুব দ্রুত শকে যাওয়ার আশষ্কাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ।
বিশ্ব সংস্থা একটি রিপোর্টে জানিয়েছে যে বর্তমান সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকেই মারাত্রক ডেঙ্গু রোগের ঝুকিতে আছে । এবার গ্রামের চেয়ে শহরে সব থেকে বেশি ঝুকিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি আছে । আগে আমরা জানতাম যে এডিস মশা শুধুমাত্র পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে সব থেকে বেশি হয় । কিন্তু আমরা এখন দেখতেছি নোংরা পানিতেও এই এডিস মশা ডিম পাড়তেছে ।
বিশ্ব সংস্থা আগে জানানো হয়েছিলো এডিস মশা শুধু মাত্র দিনের বেলায় কামড়ায় । তাই তো আমাদের সবাই একটি নোটিশ দিয়েছিলো যে দিনে বেলা কেউ ঘুমালে তারা যেন মশারি টানিয়ে ঘুমায় । বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে এই এডিস মশা দিনে রাতে সমান ভাবে কামড়িয়ে যাচ্ছে ।
আমরা জানি জেনে এই এডিস মশা শুধু বৃষ্টির পানিতে কিংবা বর্ষাকালের জমে থাকা পানিতে তারা বংশ বিস্তার করে । কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে এই মশা দিনে রাতে সমান ভাবে বংশ বিস্তার করে আসতেছে । এ বছরের জানুয়ারি থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
শীতকালে এর প্রভাব সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে । যদিও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এই মশার ভালো সম্পর্ক আছে । তবে কোথাও যদি পানি জমে থাকে তাহলে সেখানে এই মশা ডিম পাড়ে । এইসব কারণেই বলা যায় যে ডেঙ্গুও যেমন নিজের লক্ষণ বদলাচ্ছে , এডিস মশাও তেমনি বদলাচ্ছে নিজের চরিত্র ।
ডেঙ্গুর গত দুই দশক ভয়াবহতা জুড়ে আশষ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । সারণকালে সবচেয়ে মারত্নক কীটপতঙ্গজনিত মানব রোগে পরিণত হয়েছে এই ডেঙ্গু , যা সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে । তবে একটি কথা না বলে হয় না বাংলাদেশের পেছনের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ছাড়িয়ে গিয়েছে ডেঙ্গ জ্বর । তাই আমাদের সবারই এই বিষয় নিয়ে অনতিবিলম্বে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ২০২৪
কোন ব্যক্তিকে যদি এডিস মশা কামড়ায় তাহলে সেই ব্যক্তির উপর তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে এই ভাইরাস বহনকারি কারণে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখতে পারবেন । এই সব কারণ আমাদের প্রত্যেকের ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো সবারই ভালোভাবে জানা উচিত ।
যেহেতু ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি মশা-বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না । শুধু অল্প কিছু ক্ষেত্রেই রোগের প্রভাব গভীর হয় । ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয় ।

প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত স্ত্রী এডিস মশার বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াই । এই সকল মশাগুলি সাধারণত শহরে এবং আধা-শহরে এলাকায় পাওয়া যায় , পুরানো টায়ার , ফুলের পাত্র এবং বৃষ্টিতে ভরা পাত্রের মতো স্থির জলের উৎসগুলিতে বংশবৃদ্ধি করে ।
ডেঙ্গু জ্বর হালকা থেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যন্ত হতে পারে এবং এর লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রামিত মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ১০ দিন পরেই দেখা যায় আসুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় :
উচ্চ জ্বর : ডেঙ্গুর একটি বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ গ্রেডের আকস্মিক জ্বর আসা । এটি প্রায়ই গুরুতর মাথাব্যথা দ্বারা অনুষঙ্গী হয় । উচ্চ জ্বর এমন হইতে পারে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারনাইট হতে পারে ।
গুরুতর জয়েন্ট এবং পেশী ব্যথা : পেশী এবং জয়েন্টগুলিতে তীব্র ব্যথার কারণে ডেঙ্গুকে কখনও কখনও “ব্রেকবোন ফিভার” বলা হয় । হঠাৎ করে আপনার মাথা তীব্র মাথা যন্ত্রণা অনেক বেড়ে যায় ।
ত্বকের ফুসকুড়ি : একটি ফুসকুড়ি যা চুলকানি হতে পারে কিন্তু প্রায়শই জ্বর শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরে দেখা যায় । এটি দেখা যায় প্রায় সাধারণত বাহু ও পায়ে শুরু হয় এবং শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।
চোখের পিছনে ব্যথা : চোখের সকেটে ব্যথা প্রায়শই গভীর ব্যথা হিসাবে বর্ণনা করা হয় এটি একটি সাধারণ লক্ষণ । দেখবে হঠাৎ করেই আপনার চোখের পিছনে ব্যথার অনুভুতি অনুভব করবে ।
রক্তপাত : কিছু ডেঙ্গু রোগীর হালকা রক্তপাত হতে পারে যেমন নাক থেকে রক্তপাত ও মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়ে সহজে ঘা হতে পারে ।
- বমি বমি ভাব হবে
- মাথা ঘোরা অনুভব করা
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি
- উচ্চ জ্বর
- মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধিতে যন্ত্রণা
- তীব্র মাথা যন্ত্রণা
- ক্লান্তি অনুভব করা
- রক্তপাত হওয়া
- প্রচন্ড পেট ব্যথা
- ক্রমাগত বমি হওয়া
- মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত
- প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত হওয়া
- অনিয়মিত পায়খানা
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ
- দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
- বিরক্তি এবং অস্থিরতা অনুভব করা
ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীর থেকে রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে । যার ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র হয় । রক্ত প্রবাহে ক্লথ তৈরির কোষগুলো সংখ্যা কমে যেতে থাকে যার ফলে আমাদের অনেক সময় শরীরে শক লাগা মতো অনুভব হয় ।

এই সকল কারণে আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হয়ে থাকে । যে কোন অঙ্গের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হতে পারে । ডেঙ্গুর অন্যতম একটি লক্ষণ হলো শরীর ব্যথা । অনেক সময় মাথাব্যথার সাথে চোখের পেছনে ব্যথা হয় । শরীরের চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে ।
শরীর ঠান্ডা হচ্ছে মনে হতে পারে । ক্ষধা কমে যায় এবং শরীর ম্যাজম্যাজ হওয়ার লক্ষণ দেখা দিবে । সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা , পেট ফুলে যাবে এমন কি মাঝে মাঝে রক্তবমি হবে । ডেঙ্গু শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানি শূন্যতা দেখা দিবে ।
শরীরের এইসকল হওয়ার পাশাপাশি পালস রেট অনেক গুনে বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায় । যার ফলে আমাদের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় । এ সময় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে । রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন এবং ঠিক তখনি সময় নষ্ট না করে রোগি খুব দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাবেন ।
চিকিৎসক বিদ্ধদের মতামতে জানা গেছে যে , মানুষদের সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে যেমন ক্ল্যাসিকাল এবং হেমোরেজিক । ক্ল্যাসিকালে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মাঝেই এই সকল রোগি ভালো হয়ে যায় । কিন্তু বিপদ ঘটে হেমোরেজিক এর ক্ষেত্রে ।
এই হেমোরেজিক এ আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পাঁচ থেকে সাত দিন পার হয়ে গেলে মারাত্নক সংকটাপনা দেখা দিতে পারে । হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর প্রচুর রক্তপাত হয়ে থাকে । যার ফলে রক্তের অনুচক্রিকার মাত্রা অনেক কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা কমে যায় । বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দেখা দেয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ।
এই সিনড্রোম এর কারণে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায় । অনেক ক্ষেত্রে হেমোরেজিক এ আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ দিয়ে কিংবা দাঁতের মাড়ি কিংবা নাক থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তপাত হয়ে থাকে । এই সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করে । যার ফলে রোগী এক ধরনের ছটফটা আরম্ভ শুরু করে ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ঔষুধ বের করতে পারেন নাই । তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এর লক্ষণ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । এই লক্ষণগুলো দেখে আপনাকে ওষুধ খেতে হবে । ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং সাথে স্বাস্থ্যকর খাবার খাদ্য খেতে হবে ।

প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে । তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের জন্য ডাক্তাররা টাইলেনল বা প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করে থাকে যা ফলে অনেক সময় জ্বর কমাতেও সাহায্য করে । ডেঙ্গু যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে তাহলে হাসপাতালে না গিয়ে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিয়ে এই রোগ নির্মুল করা সম্ভব ।
সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । যখন আমরা ঘুমাতে যাই না কেন , মনে করে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে । ঘরে যেন মশা না থাকে সেই সকল ব্যবস্থা নিয়ে হবে সব সময় । এ ক্ষেত্রে আমরা মশার স্প্রে বা বাসার চারদিকে নেট লাগিয়ে রাখতে পারি ।
এসিড মশা কামড়ার ফলে যদি আমাদের শরীরে জ্বর কিংবা গায়ে ব্যথা থাকে তাহলে নিজ থেকে চিকিৎসা শুরু করা একদমি ঠিক না । ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটমল এবং ব্যথার জন্য অন্য কোন ওষধ সেবন না করা।
যে কোন ঔষধ সেবন করার আগে আমাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে । আপনি এই কাজটি করতে পারেন এসময় আপনি প্রচুর পরিমানে তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন । যেমন ডাবের পানি , লেবুর শরবত ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করতে পারেন ।
যে সকল ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে সেই সকল ফল বেশি খেতে হবে । কারণ এই ফলগুলো ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । রক্ত বাড়ায় এমন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত । রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায় এমন কিছু পুষ্টি ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে ।
ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের জন্য সাধারণত ক্লিনিকাল মুল্যায়ন এবং পরীক্ষাগার পরিক্ষার সমন্বয় জড়িত হয় থাকে । রক্ত পরীক্ষা যেমন ডেঙ্গু NS1 এন্টিজেন পরীক্ষার কিংবা PCR পরীক্ষা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে । তরল প্রতিস্থাপন , ব্যথা এবং জ্বর ব্যবস্থাপনা , বিশ্রাম , এই সকল লক্ষণ দেখলে আপনি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন । এই সময় রোগিকে হাসপাতে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । দরকার হলে আপনি রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করেন ।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বেরে চলছে । তবে বর্ষাকালে তথা জুন থেকে সেপ্টম্বর মাসে ঝুঁকির মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি থাকে । এই সময় বাংলাদেশের মানুষ মারাত্নক ঝুঁকিতে থাকে । এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সংক্রামিত মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা ।

আমাদের সব সময় এই এডিস মশার বংশ বিস্তারের সব রকম পরিবেশ সমূলে ধ্বংস করতে হবে । আসুন আমরা সবাই মিলে এই নিয়ম গুলো মেনে চলি তাহলে একটু হলেও ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্তি পাবো ।
- ঘরের বাইরে যখন আপনি যাবেন তখন আপনি বেরলে লম্বা-হাতা শার্ট , লম্বা প্যান্ট এবং পায়ে মুজা পড়ে পুরো শরীর ডেকে রাখার চেষ্টা করা ।
- আমাদের প্রত্যেকের উচিত সন্ধ্যার আগে ঘরের জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেয় । শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে আপনি অবশ্যই ঘুমানোর আগে মশারি ব্যবহার করবেন ।
- বাড়িতে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের বিশেষভেব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । এ সময় ঘরসয় ঘরের আঙ্গিনা থেকে মশা নির্মলের দিকে অধিক নজর দিতে হবে ।
- মশার বংশবৃদ্ধি জায়গাগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । আমরা যদি এডিস মশার বংশবিস্তার বন্ধ করতে পারি তাহলে আমরা এই ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে পারি ।
- শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম ব্যবহার করুন ।
- শিশু ও বয়ষ্কদের সব সময় বিশেষ যত্ন নিয়ে নিরাপদে রাখুন ।
- পাতলা ও ঢোলা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকুন ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বিশদ জ্ঞান অর্জন ডেঙ্গু প্রতিরোধ সহায়ক ভুমিকা পালন করতে হবে । এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিটি জনসাধারণকে সচেষ্ট হতে হবে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে ।
ডেঙ্গু জ্বর বিশ্বের অনেক অংশ একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসাবে রয়েগেছে । ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনস্বাস্থ্যের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের প্রত্যেকের উচিত আগামী প্রজন্মের জন্য যাথে করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে এখনি প্রয়োজন ডেঙ্গু নির্মূলে সোচ্চার হতে হবে ।
আমাদের banglatipsbd সাইটে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে । আপনার সুন্দর একটা মতামত দিন আমাদের সাইট সম্পর্কে । আপনাদের মন চাইলে আপনারা আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিয়ে রাখতে পারেন আর হ্যাঁ পারলে আমাদের ইউটুব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন । আবারো ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ।